চিঠি- পত্র
উড়ো চিঠি। ( অবশ্যই অপূর্ণ।)
চিঠি নং – ১০
প্রিয় সর্বনাশ,
কেমন আছো তুমি? সালাম দেইনি বলে অবাক হচ্ছো? অবাক হয়ো না। তোমায় অবাক হলে মানায় না। তোমায় বেপরোয়াতেই বেশি মানায়। আমি কাঁদলে তুমি নির্বাক। হাসলে তুমি নির্বাক। না থাকলেও নির্বাক। তুমি মেঘের গতিপথ। নিজের পথ, অন্যের বধ।
আমি তোমার বিরক্তের কারণ হয়তো। কিন্তু কখনো ভেবেছো? এত মানুষ থাকতে, আমি কেন তোমার বিরক্ত?
তোমার সাথে কতকথা থাকে আমার অনিরুদ্ধ। ঠাকুমার ঝুলি খুলে বসি। কিন্তু তুমি সুযোগ দেও না। কই, অন্যকারো সাথেতো এত কথা বলিনা!
আমি গুরুত্ব দেই। তুমি দূরত্ব বাড়াও। ভাবনায় থাকে, যাবে আর কই! তুমি কি জানো? যাওয়ার জন্য গোটা জগৎ আছে। কিন্তু আমিতো তোমার আকাশের জেলখানার কয়েদি হতে চাইছিলাম।
আচ্ছা কী হচ্ছে বলোতো? আমি তোমার যোগ্য নই তাই না? যোগ্যতো কেউ হয় না। ভালোবাসা ক্রুটিগুলো ছাপিয়ে রঙিন হয়। প্রজাপতির পাখায় থাকে ভরসা।
তুমি কতকিছু চাও আমার মাঝে, কিন্তু তা নেই। কী করব বলো? আমি মানুষ, কোনো পণ্য নই। তাই সব গুণগত মান ঠিক রাখা যে অসম্ভব।
তোমার কেউ ছিলো। প্রাক্তন বলব না। কারণ, ভালোবাসা কখনো পুরনো হয় না। কত গুণবতী ছিলো সে! তার সব তোমার চাই আমার মাঝে। তাকে দিন রাত খুঁজো তুমি আমার ভাজে।
আমি বড়জোর তোমায় মুগ্ধ করতে পারি। তোমার হৃদগহীনে নিজের একটা ক্ষুদ্র সিংহাসন গড়তে পারি। কিন্তু সে হতে পারি না। কেউ যে কারো মত হয় না। একজনের মাঝে অন্যজনকে খুঁজলে যে পাবে না। প্রতি মানুষ ভিন্ন। আত্মায়, সত্তায়। আমি বড়জোর তোমার জন্য নিজের প্রতি যত্নশীল হতে পারি। নিজেকে একটু গুছিয়ে নিতে পারি। কিন্তু তোমার পছন্দ মত শরীরের রঙ, চোখের চাহনি, চুলের ভাজ পাল্টে ফেললে যে সৃষ্টিকর্তার পছন্দের অসম্মান হয়!
তুমি আমায় ভেঙে চুড়ে তার মতো গড়তে চাও। তাকে দেখিয়ে দিতে চাও তার চেয়ে ভালো কেউ আছে তোমার জীবনে। তুমি তার চেয়ে খুশি। কিন্তু ভালোবাসায় কী প্রতিদ্বন্দ মানায় অনিরুদ্ধ। কার সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছ তুমি? রঙিন দুনিয়ার মোহে পড়ে, এত বছরের বিশ্বস্ত হাতটা ছেড়ে যে তোমায় বেরঙিন করেছে? ছাড়ার আগে যে তোমার কথা ভাবেনি?
তুমি কি ভাবছো? এসব করে জিতে যাচ্ছ তুমি? তুমি কী বোকা গো! সেতো হেরে গিয়ে জিতে গেছে। আশেপাশে না থেকেও সে তোমার ভাবনায় থাকছে। ভুলেছে যে তোমায় চোখের পলকে, রাখো তুমি তারে পরিকল্পনার আলোকে। এরচেয়ে বড় জয় আর তার কী হবে বলো? অনুপস্থিত থেকেও সে অহর্নিশ ক্ষতবিক্ষত করছে তোমায়।
তুমি তাকে ভুলোনি। অন্যকাউকে সে ভেবে থাকতে চাইছো। এটা সম্ভব বলো? আমি কি মানুষ নই? আমার কেমন লাগে, যখন আমি তোমায় দেখি? বারংবার অন্ত আত্মা নিঃশব্দে চিৎকার করে বলে, এই আঙুলের ভাজে অন্যকারো আঙুল ছিলো। এই ঠোঁটের ছোঁয়ায় শিহরিত হয়েছে অন্যকেউ। অন্যকোনো নারীময় ভাবনায় কাটে তোমার দিন। আমি দুমড়ে মুচড়ে যাই জানো? তবু ভেঙে চুড়ে তোমায় ভালোবাসতে চাই। অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি যে আমার স্বভাব নয়।
তুমি বলবে এটাই বাস্তবতা। একজনের পরে অন্যকে আর বিশ্বাস করা যায় না। আমিও মানি। কিন্তু কখনো ভেবেছো, কেন এটাই বাস্তবতা? আমরা এমনি করে ভাবতে শিখেছি বলেই এটা বাস্তবতা। আমাদের ভাবনাময় কার্যক্রম পরিবর্তন করলে বাস্তবতাও পরিবর্তন হবে। তুমি বরং আমার মাঝে তাকে নয়, আমায় খুঁজো। আমি চাই তুমি আমায় ভালোবাসো।
কিন্তু এ হওয়ার নয়। তুমি প্রতিনিয়ত তাকে অন্যকারো ভাজে খুঁজবে। একের পর এক গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলবে তাকে পাওনি বলে। অনিরুদ্ধ, কবে তুমি স্বচ্ছ বাস্তবতা বুঝবে?
আমি আর তোমার নিছক বিরক্তির কারণ হবো না। তুমি কখনো আমার একমুঠো কাচের চুড়ি হবে না। তুমি নাহয় আমার আজন্ম আক্ষেপ হয়ে রইলে। আমি তোমায় ভালোবাসি এটা আমার দুর্বলতা নয়। ভালোবাসা কখনো দুর্বল হয় না। সর্বোচ্চ শক্তিশালী আবেগ ভালোবাসা। তোমায় নিয়ে দেখা স্বপ্নগুলো নাহয় বন্ধি থাকুক মেঘের খামে। তুমি আমার জীবনে এলে আমরা কেউই খুশি থাকব না। দুঃখিত, আমরা নয়। আমার আর তোমার মাঝে আমরা নামক কোনো শব্দ নেই। কারণ আমি তোমার পছন্দের মানুষ নই, যার ভাজে ভাজে মুগ্ধতা। আশাগুলো মৃত। কারো প্রতি আশা রাখা বোকামি। যত আশা অন্যের প্রতি, তত কমে সুখের জ্যোতি। আসি অনিরুদ্ধ। ভালো থেকো।
ইতি,
নামে কী আসে যায়,
কখনো বুঝবে না তুমি আমায়!