★সাহিত্য সম্ভাবনায় ক্যারিয়ার গঠন ও মানবিক চাওয়া পাওয়া★
—পারভীন আকতার
★বর্তমানকে বাঁচিয়ে রাখতে আপনি অন্যের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করবেন নাকি নিজের অভিজ্ঞতার মতবাদ,দর্শন প্রতিষ্ঠা করবেন ভেবে নিন।অন্যের কথা বলিয়ে, নিজের লেখাকে ভারী করার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।যুক্তি দিয়ে বুঝাবেন,মানা না মানা এটা পাঠকের উপর বর্তাবে।জনৈক একজন সাহিত্য সমালোচক কথায় কথায় শুধু সাহিত্যের দোষ খুঁজে বেড়ান।ফাঁক খুঁজেন লেখকের লেখায় যাতে তাঁর আলোচনা সমালোচনা দারুণ বিদ্রুপ সুখপাঠ্য হয়।তিনি যেন আত্মতুষ্টি নিয়ে সাহিত্যের আগাগোড়াই বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে পারেন।তবে এসব তাঁর কথা নয়।সব অন্যরা বলে যাওয়া সাহিত্যের দর্শন অবতারণা কেবল।নিজ থেকে বলার ক্ষমতা কয়েক লাইন মাত্র।উনাদের তুষ্ট করতে আবার কিছু লেখক কুচুরমুচুর করেন।তাঁদের লেখা যেন সমালোচনা তিরস্কার থেকে মুক্ত থাকে।কেউ কেউ সখ্যতার বশে জন্মদিন থেকে লেখা প্রকাশও দারুণ প্রচারে ব্যস্ত দেখা যায়।এঁদের আবার দামী মানুষের সাথে উঠা বসা!তাই হাত খেলিয়ে বেড়ান সর্বত্র।
★কিছু কবিরা আছেন তাঁরা এতো টা উঁচুমানের নিজেদের মনে করেন,তাঁদের লেখাই যেন শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে কয়েকটি জাতীয়, আন্তর্জাতিক পুরষ্কারজয়ীর কারণে।সাধারণ মানুষ এসব জানে না বা জানতেও চায় না।সাহিত্যের মানুষজনই তাঁদের তুলে ধরে আবার নতুন লেখকরা এঁদের কাছে তুলোধুনো হন।পাত্তা পায় না।কথা হলো,পৃথিবীর আর্বতনে মুরুব্বি শ্রেণির লেখকরা চলে গেলে নতুনদের কি তবে কেতন উড়বে না?এত হেলা কেন নতুনদের নিয়ে?তাঁরাও একদিন মুরুব্বি শ্রেণির লেখক হবেন।তাই নয় কি?এতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার মানসিকতা কেন? প্রকাশক নতুন লেখকদের চড়াদামেই পান্ডুলিপি ছাপানোর জন্য মরিয়া।বড় লেখকদের প্রতিযোগিতায় প্রথম করে সম্মান দেয় নাম স্বর্বস্ব লেখা হলেও।তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে।
★একজন লেখক মেধাস্বত্ত্ব দেবেন। তিনি কেন অর্থ দিয়ে বই বের করবেন?কেন তাঁকেই প্রচার,প্রসার আর বিপণনের গুরুভার দেয়া হবে?তাহলে প্রকাশনীগুলোর কাজ কী?ISBN নং দেয়া আর ছাপাখানায় ছাপানোর কাজ শুধু?সম্পাদনা কেবল করা! তাহলে লেখকের মেধার মূল্য কোথায়?রয়েলিটি কে দেবে লেখককে তাঁর মেধার কাজ, দর্শন আর প্রচুর মূল্যবান সময় ব্যয় করে,না ঘুমিয়ে লেখা প্রসব করার?দিনরাত এটা নিয়ে পড়ে থাকা কি তবে মূল্যহীন হয়ে যাবে?তাহলে কিভাবে এই দেশে দার্শনিক, মেধাবীরা উঠবে?অগ্রজরা মুখে টিপ্পনী দিয়ে হাসেন।তাঁদের বই বিনাখরচে ছাপানো হয়,রয়েলিটি পান,কদর তো সবর্ত্র আছেই।তাঁরাও একসময় সংগ্রাম করেছেন।কথাও শুনেছেন।ভাগ্য ফেভারে ছিল,জায়গা হয়ে গেছে।এখন ব্যানারেও সবার আগে শোভা পায়!আর এখন অনুজরা হজম করবেন। আর বেশি বলতে গেলে বলবেন, তোমার বেশি অহংকার। লিখতো এসেছো লিখো।এত লাফালাফির কী আছে?বই বের করতে এমন কথা আছে?এসব কথা আমাদের শুনতে হয়।চল্লিশ বছর শুধু পড়েই গেলাম।তারপর কলম ধরেছি।তবুও বলেন আমরা অনভিজ্ঞ!আমাদের মাথা থেকে অভিধান,প্রমথ সমগ্র, জীবনানন্দের কবিতার লেখা কি পরীক্ষা দিতে হবে?সার্জারীর মাধ্যমে বের করে দেখাতে হবে; কেমন লেখার বীজ বুনে দিয়েছেন উপরওয়ালা!জীবনানন্দের সময় তাঁরও মূল্য ছিল না।কবি ফররুখ আহমেদের,কবি নজরুলসহ প্রমুখের সেই একই কপাল ছিল।তাঁরা যখন মরেছেন,তাঁদের লেখা গবেষণার বিষয় হয়েছে এখন।তাঁদের লেখার ভান্ডার নিয়ে এখন পিএইচডিও অনেকে করে গর্ববোধ করেন।আশ্চর্য!
★নিজের বই বের করে মরতে পারলে শান্তি।হয়তো আজ কদর নেই।মরলে কদর হবে অগ্রজ লেখকদর মতো। আশা করতে দোষ কী?মেধাতো স্রষ্টার দান।তবে প্রকাশ করে যেতে হবে।একজন সাধারণ শিক্ষকের বা সাধারণের ভিতর অসাধারণ চিন্তাশক্তির মানুষের একাধিক বই বের করার পয়সা কোথায়?কোন প্রকাশনা,ব্যক্তি এতে এগিয়ে আসে না।লেখক তাদের কাছে ভিখারীর মতো।
★বই যদিও একটি সৃজনশীল পণ্য।বইয়ের গায়ে টাকার রেট লেখা থাকে।তবুও সবাই কেমন যেন আশা করে বইতো,ফ্রী দিলে অসুবিধে কী?কে পড়ে এসব?শার্ট জামা বা খাদ্য হলে কিনে নিতাম এই অবস্থা! যে বই পড়ে জীবনের মোড় ঘুরে যায়, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়, সেই বই কি জামা কাপড়, কসমেটিকসের সাথে তুলনা করা চলে?দুঃখের বিষয় এটাই আমরা করি।প্রয়োজন মনে করে কোন লাইব্রেরীতে আগ্রহ ভরে যায় না মানুষ।নতুন কোন বই তাদের ভাল কাজ দিবে কি না জানা বা দেখার আগ্রহ নেই বললেই চলে।লেখক তাহলে কি লেখকের জন্যই লেখেন?সাহিত্য জগতের মানুষদের জন্য এতো শ্রম, টাকা, মেধা আর সময় ব্যয় করেন লেখক আর প্রকাশক?আমাদের সন্তানসম বইগুলো যে আমরা এতো মেধা,শ্রম,মাসের মাস,রাতের পর রাত জেগে,লেগে থেকে প্রসব করেছি তার মূল্য কি শুধু পরপারে পাবো?তাও কেউ কেউ বলেন নিজের লেখার দায় নিতে হবে নিজেকেই।যার মেধা প্রভু যেটা দিয়ে লেখাচ্ছেন, লেখক তাই লিখছেন।এতে কার মাথা ব্যথা,প্রয়োগ,আত্মস্থ করা ক্ষমতা এটা একান্তই তার বিষয়। যে পড়ে মানে বুঝতে অক্ষম তার দায় কেন লেখক নেবে?হতদরিদ্র থাকে এজন্যই মেধাবী লেখকরা।ঘরে ভাত ডাল থাকে না ঠিক;মস্তিষ্ক থাকে দারুণ মেধা উর্বর। তাঁদের পাশে দাঁড়ান,এগিয়ে যেতে হাতে হাত বাড়ান লেখক,পাঠক,প্রকাশক, জনতা আর স্বয়ং রাষ্ট্র এই কামনা করি।হীরে চিনতে ভুল করবেন না।পরে বৈতনিক লেখক রাখার চিন্তাও একসময় করতে হবে ঠিক মোগল আমলের মতো।আশা করি সেই দিন বেশি দূরে নয়।
পারভীন আকতার
শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক
চট্টগ্রাম।