সোনার বাংলা
উম্মে কুলসুম মুন্নি
কাদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় ছেঁয়ে গেছে চারদিক,
বারুদের গন্ধে দম আটকে যেতে চায়,
রক্ত গঙ্গা বয়ে যাচ্ছে রাজপথে ।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ছেড়া প্ল্যাকার্ড,ফেস্টুন ।
ঘাতক বুলেটের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে নিস্পাপ দেহ গুলো,
কিছু নিষ্প্রাণ আর কিছু শরীরে এখনো হৃদপিণ্ডটা বেঁচে থাকার আকুতি জানাচ্ছে ।
ক্ষীন স্বরে মৃত্যুর দুয়ারে দাড়ানো মায়ের আদরের খোকা এখনো হয়তো বলছে,
মাগো, ওরা আমার মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়,তোমার কোলে শুয়ে তোমার মধুর কন্ঠে ঘুম পাড়ানিয়া গান শুনতে দিতে চায় না ।
তুমি বলো মা, তা কি হয় ?
তাই তো আজ তোমার মায়াবী দৃষ্টিকে ফাকি দিয়ে, তোমার কথার অবাধ্য হয়ে আমি রাজপথে নেমেছিলাম ।
ওদের ধৃষ্টতা মেনে নেই কি করে ?
তুমিই তো শিখিয়েছ,কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করতে,
সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজনে জীবন দিতেও পিছ পা না হতে,
তোমার কথা মনে রেখেই তো ওদের বিরুদ্ধে কন্ঠ জাগিয়েছি,
ওদের রক্তপিপাসু স্পর্ধাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বজ্রমুষ্ঠি উঁচিয়ে গর্জে উঠেছিলাম ভাষার দাবীতে,
কিন্তু ওরা তো এত সহজে মেনে নিবে না তাই তোমার নিস্পাপ ছেলেদের উপর নির্বিচারে গুলি চালালো, রক্তের গন্ধেই নাকি ওদের আত্মতুষ্টি,
তুমি ভেবো না মা,
ওরা না হয় তোমার একসন্তানকে হত্যা করেছে কিন্তু এমন লক্ষ হাজার সোনার সন্তান রয়েছে,
যারা ভাই হত্যার প্রতিশোধ একদিন ঠিক নিবে,
তুমি দেখে নিও,
তোমার কন্ঠরুদ্ধ হতে দেবে না তারা,
সন্তান হারানোর দুঃখে তোমার দুচোখের লোনা নদীর বন্যা একদিন ঠিক ওরা রুখে দেবে,
সেদিন তুমি বুঝবে তোমার শিক্ষা বৃথা যায় নি,
তোমার ভালোবাসা মমতায় একটু একটু করে বেড়ে উঠা ছোট্ট খোকা অনেক বড় হয়ে গেছে।
মায়ের ভাষা,সন্মান আর অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে যে জীবন দিতে পিছপা হয় নি।
রক্তের বিনিময়ে জাতিকে যে দিয়েছে শ্রেষ্ঠ উপাধি বাঙালি।
যার দেখানো পথেই আজ বিশ্বের মানচিত্রে গৌরবান্বিত একদেশ,
সোনার বাংলাদেশ ।
উম্মে কুলসুম মুন্নি
আইনজীবী
ঢাকা