স্বপ্নিল সাহিত্য কুঠি
শিরোনাম : হৈমন্তীর আলাপন
কলমে : সোমা বসুমল্লিক
তারিখ : ১৪/২/২০২১
হৈমন্তী আজ কার আকুল ডাকে
আলুথালু বেশে মাঠ প্রান্তর পেরিয়ে
চলেছে ধেয়ে স্বপ্ন ভাঙাগড়ার দিনে
চেনাপথ ছাড়িয়ে না ফেরার দেশে!
আকাশ বাতাস থমকেছে অঘ্রাণের সন্ধ্যায়
মেঘবালকেরা মুখ লুকিয়েছে ধূসর কুয়াশায়!
শিশির বিন্দুরা টপটপ করে ঝরছে
হৈমন্তীর নয়ন ছুঁয়ে অনাদরে
তার সোনালী আঁচল বেয়ে তৃণমূলে
পাকা ফসলের খুশি চাষীবউদের কোলে।
রিক্ত হাতে হৈমন্তী চলে আনমনে
নবান্নের ক্ষেতের আলপথ ধরে ধীরপায়ে
বিষণ্ণ হৈমন্তী আজ এগিয়ে চলে
মেটে জোৎস্নায় নিজেকে নিয়েছে রাঙিয়ে
খুঁজে বেড়ায় মেয়েবেলার হযবরল গল্পদের।
তাঁকে ছেড়ে চলে গেছিলো অরুণ
গোধূলি সন্ধ্যায় ইমন কেঁদেছিলো করুণ
বসন্তসখাও হয়তোবা আজ একা শতাব্দীশেষে!
উথালপাথাল ঝোড়ো হাওয়ায় যদি সে
ঝরে যায় তবে ঝরাপাতাকে ভালোবেসে
কেউকি অন্তরঙ্গতার বীণ বাজিয়ে শোনাবে?
কেউকি ফিসফিস করে কানেকানে বলবে
ওরে আমি আছি তোর পাশটিতে
তোর হাতদুটো শক্ত করে ধরে
তোর সাথে যুগ যুগান্তরের বাঁধনে!
নাইবা তান উঠলো সপ্তসুরের সঙ্গমে
ঋতুরঙ্গের আলাপন হয়না কখনো মিছে
আপন খেয়ালে ধরায় আসে সৃষ্টিসুখের পিছে!
দূরে কোথাও লক্ষ্মীপেঁচা ডেকে ওঠে
ধবল জ্যোৎস্নার পাল এগিয়ে চলে
হৈমন্তীর সারা শরীরের রক্তরস যেনো
কোনো দুষ্ট দানব নিংড়ে নেয়!
তবুও সে চলে আলোকবর্ষের পথে
তাকে পৌঁছতেই হবে ভবসাগর পারাবারে
ডিঙি নৌকা বেয়ে সে যাবে
মোহনায় অতল জলরাশির নির্ঘুম আশ্রয়ে!
নবান্নের খুশীতে সবাই মেতে ওঠে
হৈমন্তীর মন ভরে যায় সুবাসে
কার বিরহে ভালোবাসার আপনজনদের ছেড়ে
সে কোথায় চলেছে কেনইবা চলেছে
কার ওপর অভিমানে নিজেকে ভুলেছে
নিয়তির কাছে কেনইবা প্রাণকে সঁপেছে!
দূরে কোথাও তুলসীতলায় শাঁখ বাজলো
কারা যেনো নাম ধরে ডাকলো
মালকোষ রাগের মূর্ছনায় ভুলভুলাইয়াতে হারালো
মেয়েবেলার অলীক স্বপ্নরা আবেশে জড়ালো!
প্রেমিকমন অচৈতন্য হৈমন্তীকে ঘরে ফেরালো
তার শীর্ণ ক্লান্ত দেহটাকে পুরুষালী
আদরে সোহাগে ভরিয়ে বুকে জড়িয়ে
হেমন্ত বলে ওঠে ” আমি আছিতো”!
অধমের ওপর কেনো ভরসা রাখোনা
জীবনের প্রতিটি দিন আমাদের ভ্যালেন্টাইন
একথা আজো কেনো বুঝতে পারোনা!
আনন্দাশ্রু নেমে আসে হৈমন্তীর আঁচলে
ভালোবাসার কাঙ্গালিনী ভাসে বাঁধভাঙা প্লাবনে!
চিরপুরাতন প্রেম ঢাকে নিশ্চিন্ত নির্ভরতায়
পঁচিশটা বসন্ত আগলেছে ভালোবাসার ছোঁওয়ায়।।
সৃষ্টির মান্যতা সুখে প্লাবিত হৃদয় বঙ্গসাহিত্যের মোহনায় ভাসলো!
গ্রাম শহর জনপদ পেরিয়ে কল্লোলিনীর তটে সোহাগে হারালো।