মোর সমাধি উঠবে কাঁদি
……………………………….
মো. আসাদুল হক
চাঁদপুর- ০৫.০২.২০২১ খ্রি.
পোস্টের তারিখ- ১৩.০২.২০২১ খ্রি.
উদয় উন্মুখ অরুণ উঠি উঠি
মম ঊষার ভালে পরিপাটি তূর্য ঘাটি
কিরণ রাঙ্গানো অম্বরের পূর্ব দিগন্ত
যৌবন কিশলয় দিকে দিকে বাড়ন্ত
দুপুর তালে করাল, খুন টগবগ
উতলা সিন্ধু বারি
সে তুমি বিহারি ছেড়ে অলক
গতি রোধে থাকলে দাঁড়ি
বাসনা তোমার উচ্চারি, বেদনার বুক উজাড়ি
অনুরাগ দহনে মম পানে পড়ছিলে ঝরি ।
তারি দাবানল ছড়ালো সারা ভুবনে
মম যতো ঘনত্ব কোষের কোণে কোণে
দীপ্তি প্রকর অরুণ, নীরদের বাধায়
শুধায় তার অভিপ্রায়
ষোড়শী সংকল্প আধো উচ্চারে দিয়েছিলে ছুঁড়ে
বিড়বিড়ে, ঢেউ তুলে ঝিরঝিরে, মম অন্তরে ।
উচ্ছ্বাসে রাজহংসী পদ্ম পুকুরে পাখা নাড়ি
পথিক আমারে তোলপাড়ি
দখিন সমীরে নেড়ে পাপড়ি
মম শায় নিতে শত বাধা উত্তরি
হে- দীপশিখা দিপালী
পেতে তব ভিক্ষার থালি
নিতে ভরে অঞ্জলি
তব জ্যোতির আলো জ্বালী ।
নিলে হে- তুমি ঠাঁই করে মম অন্তর তলে
যে জমাট গলেনি কোন কালে
সেই তুমি, গলালে পলে পলে
প্রেমানলে
সাধ্য পুষতো না যে মহাবলে
এমন কী সুবাস ছড়ালে
মোহিতো আমি, অর্পিত আমি
ইশারায় তোমাতে গমি ।
এই যে গমি, আমারে শপি
তোমার প্রেমধূপ ধোঁয়ায় ঝাঁপি
না হেরে শশীর হাসি
নিরবধি গেছি তোমারে বাসি
কাটে কাল তব প্রণয় বাগে বসি
রেখে বিশ্বাস রাশি রাশি
এ তৃষিত হৃদে কেবলি তোমারে পূজে
কেবলি ছিলেম তোমাতে মজে ।
আবডালে অন্তরালে কারে কি কথা শুধালে
জানে শুধু তা- তোমার একান্ত বিরলে
আমি জানতাম আমার বীণা বাজিছে আমার তালে
কেবলি তোমার সুর তুলেছি আমার বাঁশীর বোলে
জগতের সকল বিশ্বাস এক করে
দেখেছি তব কায়া মোর মনোমন্দিরে
অনুরাগ ঢল স্রোতে হার মানিয়েছে সিন্ধুরে
যে চাওয়ায় নামায় অঙ্গনে ইন্দুরে
যে ভালবাসায় পৌছায় দিশায়
মহাসাগরের স্রোত যেমন ধায়
তেমনি ধেয়েছি লভিতে সর্পের মণি
কেবলি আমি জানি, কেবলি আমি জানি ।
সাক্ষী অহ্ন বিভাবরী
সাক্ষী যে পথ দিতাম পাড়ি
সাক্ষী ভাবনায় তোমারে নিয়ে, বাইতাম যে তরী
সাক্ষী তোমারে ভাবনার মম গুঞ্জরন লহরী ।
এমনও পূজারীরে কোন্ অন্তরে
দেখছিলে অবহেলার নজরে ?
তাও জানলাম দীর্ঘ বরষ পরে
একি পূষ্পে যবে কতক অলি উড়ে
শাখা দুলে নিঃসন্তর্পণে সেই অলিরে ধরে
কামনা মোর কাঁদে ডুকরে, কেনো যাইনি মরে
কারে রেখেছিলেম মনোমন্দিরে !
ফেলে মম যৌবন ভাতিরে অবজ্ঞার তোড়ে !
মম হৃদয় আগার শূন্য করে
ওরে- গিয়েছো যে আকাশে উড়ে
দিপালী- জ্বলে উঠেছো যার বাসরে
শোভিত উজালা যার কদরে
কেঁদো না রে-
আমার পূজার ঋণ ভারে
যেটুকু প্রাপ্তি, হবে না রে- তারি সমাপ্তি
মোর যবনিকায়ও রবে তোমারি ব্যাপ্তি
প্রলাপ বোলেও বলিনে তোমার অখ্যাতি
তোমার সুখে জ্বালাও হেথায় তোমার বাতি ।
তুমি আজি যার পূজারিণী
করো এলোমেলো তব কুন্তল বেণী
তার মতো বনি
হও তার রাণী ।
স্মৃতির পাতার মর্মর ধ্বনি
থেকো, শুনেও- না শুনি
হয় তো আসবে চোখে পানি ; মোছে নিও
না ঝরলে পানি ; আনন্দ পিও
তোমার দেবতুল্যরে লয়ে
যামিনী রাণী হয়ে ।
আমার তপ্ত শ্বাসপ্রশ্বাস
পোড়াবে না তোমারে ; আমার বিশ্বাস
থাকি যদি ক্লিষ্টতায় পড়ে
সেই তোমার আসার পথ ধারে
নজরহারা এই আমারে, শ্রীহীন বদনে
তোমারা দু’জনে, চিনতে পারবেনে ।
কালের যাত্রার ধ্বনি শুনি
অস্তগামী হবো জানি
বিরহে দগ্ধ দেহখানি পড়ে রবে অনাদরে
তখন সেই মর্মর আবহরে
লুকিয়ে রাখতে মৃত্তিকা কুড়ে
সমাহিত করবে হয়তো কবরে ।
বাতাস যদি বয়ে নিয়ে যায় তোমার কানে
রইতে পারবেনা হয়তো প্রমোদ সিনানে
অতীত আসবে অতিথি হয়ে
যতো বিরহের কান্না লয়ে
দুরাত্মা ভেবে নিজেরে
প্রথম যৌবনের স্মতি স্মরে
ছুটবে হয়তো মোর কবরে
যদি তাই হয় রে- যদি কাঁদো ডুকরে
এতো দিনে হায় ! বুঝতে পারো যদি !
তখনো- মোর সমাধি
উঠবে কাঁদি !